বাংলাদেশে শিতকাল কেমন হয় - শীতের পিঠা উৎসব ও আনন্দ

কেমন হয় বাংলাদেশের শীতকাল জানার  আগ্রহ  হচ্ছে আপনার, আরো জানতে চান শীতকালে কি কি উৎসব হয় এবং কোন কোন পিঠা পুলি তৈরি করা হয়। এমনকি শীতকালে বাংলাদেশের সবচেয়ে শীত প্রবণ অঞ্চল কোথায়। তাহলে আর দেরি কিসের এই আর্টিকেল এর মধ্যেই সকল তথ্য জেনে যাবেন।


বাংলাদেশের শীতকাল সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে নিচের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আশাকরি আপনি আপনার সকল প্রশ্নের সমাধান পাবেন।

ভূমিকা 

বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু । তার মধ্যে শীতকাল অন্যতম একটি ঋতু । সাধারণত পৌস-মাঘ বাংলার এই দুই মাস নিয়ে শিতকাল গঠিত । ইংরেজী মাসের মধ্য ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে শীত শেষ হয়ে যায় । এই সময়কাল ধরে বিভিন্ন পিঠার আয়োজন করা হয় যা অনেক সুস্বাদু ও মজার হয়।  শীতের সকাল কুয়াশাইয় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। সকালের অন্যতম নাস্তা হল খেজুরের রস সাথে মুড়ি। 

বাংলাদেশে কিছু অঞ্চল আছে যেগুলোই শীতের দেখা মেলে অতিরিক্ত মাত্রায়। বাংলাদেশের উর্বরতা ভালো হওয়ার কারণে শীতকালের  মৌসুমি বিভিন্ন ফল ও শাকসবজি পাওয়া যায় ।বাংলাদেশের শীতকালের আমেজ টি প্রায় সকলেরই অনেক পছন্দের । কেননা বাংলাদেশের শীতকালে পিঠার বিভিন্ন উৎসব আয়োজন করা হয়ে থাকে।

 বাংলাদেশে শীতকাল কেমন হয় 

বাংলাদেশের শীতকাল হয় তীব্র এবং প্রচন্ড কুয়াশাময়। কেননা উত্তর দিগন্তে হিমালয়ের বরফ চূড়া থেকে ছড়িয়ে পড়ে হিম শীতল নিঃশ্বাস। শীতের ভোর শুরু হয় প্রচন্ড কুয়াশার মধ্য দিয়ে  যা দুপুর হতে হতে মিষ্টি রোদে পরিণত হয়। শীতের রোদ যেন এক আনন্দের প্রতিমা হিসেবে সকলের মাঝে দেখা দেয়। আবার সূর্য অস্ত যেতে যেতেই তীব্র শীতে ঘনিয়ে আসে চারিদিকের পরিবেশ। 

রাত যত গভীর হয় শীতের গভীরতা ততো বাড়তে থাকে। তবে শীতকালের প্রতিটি দিনে একই রকম ঠান্ডা অনুভব করা যায় না। 

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী শীত পরে কোন অঞ্চলে

ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোই বেশি শীত পরে। পাশাপাশি মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থানের কারনে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলো শীতল এলাকা হিসেবে বিবেচিত। বলা যায় যে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর অফিসের ধারণামতে এ সকল অঞ্চলে একসময় দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শীতের দেখা পাওয়া গেছে। 

বাংলাদেশের শীতকালীন ফল ও শাক-সবজির উপকারিতা 

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। তাই শীতের এই মৌসুমে বিভিন্ন মৌসুমী সবজি ও ফল উৎপাদন করা হয়ে থাকে। 

শীতকালীন ফলের নাম সমূহ

 গাজর, বিট, ব্রকলি , বিনস্ , টমেটো , ক্যাপসিকাম, সিম , এছাড়াও ইত্যাদি নানা ধরনের শীতকালীন ফল পাওয়া যায়।

শীতকালীন শাক সবজির নাম সমূহ

লাউ , মিষ্টি , কুমড়া , ফুলকপি , বাঁধাকপি ,  মটরশুঁটি , শালগম , পালং শাক, টপ পালং , মুলা , ব্রকলি , কচু ,  ইত্যাদি নানা রকম সবুজ শাকসবজি।

এই সকল ফল ও সবজির মধ্যে প্রতিটি ফল ও সবজি আমাদের শরীরের জন্য প্রচুর পরিমাণ এর উপকারিতা বহন করে এবং শক্তি যোগান দেয়। এ সকল ফল ও সবজি সুস্বাদু ও আমাদের দেহের জন্য  স্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। ফল ও শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন , আয়রন , পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা।এমনকি শীতকালীন এ সকল ফল ও শাকসবজি বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণ এর মাধ্যমে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করে সারা বছর খেতে পারি। 

শীতের বিভিন্ন পিঠা পুলি

পিঠা-পুলি নিত্যদিনের খাবার নয় কিন্তু শীত মানেই বিভিন্ন পিঠার সমাহার। ঘরে ঘরে বানানো হয় মজার মজার পিঠা। ছোট বড় সকলের পছন্দ শীতের পিঠা। শীতকালের পিঠার নাম বলে শেষ করা যাবে না।
জনপ্রিয় পিঠা পুলির নামসমূহ
ভাপা পিঠা , পুলি পিঠা , নকশি পিঠা , বড়া পিঠা, পাতিসসাপতা , কুশলি পিঠা , দুধ পুলি পিঠা , চিতাই পিঠা , রসচিতাই , নারিকেল পিঠা , ইত্যাদি। এ সকল পিঠার মধ্যে ভাপা পিঠা একটি অত্যাধিক জনপ্রিয় পিঠা যা সকলের পছন্দের।

শীতের পিঠা উৎসব ও আনন্দ

কালের গভীরে কিছু হারিয়ে গেলেও এখনো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি শীতের এই পিঠা উৎসব। শীতকালে শুধু গ্রামবাংলাতেই নয় , শহর এলাকাইও পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। শীতকালেই শুরু হয় ঘরে ঘরে পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ। এমনকি বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানিয়ে দাওয়াত করে খাওয়ানো হয় আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব এবং আপনজনদের।এতে শীতকাল হয়ে ওঠে আনন্দের এবং উৎসবমুখর।

শীতকালীন ছুটিতে দূর দুরন্ত থেকে আপনজনদের আগমন ঘটে এই সময় বিভিন্ন পিঠা বানিয়ে পরিবেশন করা হয় যা একটি আনন্দময় উৎসবে পরিণত হয়। ছোট বড় সকলের পছন্দ শীতের বিভিন্ন সুস্বাদু পিঠা। এক এক পিঠা একেক ধরনের নিয়মে তৈরি হয়ে থাকে যার ফলে দেখতে লাগে সুন্দর এবং খেতে হয় সুস্বাদু। পিঠা ছাড়া শীতকাল যেন পরিপূর্ণতাই পাই না। এমনকি শহরের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় পিঠা উৎসব নামে পিঠার মেলা। এই পিঠার মেলা দেখতে ও পিঠা খাবার জন্য অনেকেই হাজির হয়। 

শেষ কথা

বাংলাদেশের যেহেতু শীতকাল উপভোগ করা যায় দুই থেকে প্রায় তিন মাস। তাই বাংলাদেশের মানুষ এই শীতকালের শীতকে বিভিন্নভাবে উপভোগ করতে পছন্দ করে। কেননা শীতকাল ঠান্ডা হলেও বাংলাদেশে এর মৃদু আবহাওয়া উপভোগযোগ্য। এটি আমাদের প্রচুর ফল ও শাক-সবজি দিয়ে পুরষ্কৃত করে। সর্বোপরি এটি আনন্দের ঋতু যা বসন্তের সূচনা ঘটায় ।

আমার এই আর্টিকেল যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন । 




Next Post
No Comment
Add Comment
comment url