বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি - বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব

বন্যা কেন হয় তা জানতে চান। বন্যার সময় আপনার আমাদের কি করণীয় অবলম্বন করা দরকার এই নিয়ে চিন্তায় আছেন। শহরের বন্যা ও গ্রামের বন্যার মধ্যে পার্থক্য কি আছে। গ্রামাঞ্চলে বন্যা হলে কেমন ক্ষতি হয় এবং শহর অঞ্চলে বন্যা হলে কত রকম ক্ষতি হতে পারে সবকিছুই জানতে পারবেন এই পোষ্টের মাধ্যমে।


বন্যার হাত থেকে কিভাবে রেহাই পাবেন এবং অন্যকে সতর্ক করবেন এই সকল টিপস পেতে হলে নিচের সমস্ত পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

ভূমিকা

বাংলাদেশ একটি বন্যা প্রবণ দেশ।কেননা এদেশের ওপর দিয়েই বঙ্গোপসাগর প্রবাহিত হয়। বাংলাদেশের প্রায় অঞ্চলেই প্রতিবছর কম বেশি বন্যা হয়ে থাকে। শুধু বর্ষাকালের নয় শীতের শুরুতেও যে প্রবন বৃষ্টিপাত হয় সেই সময়ও প্রায় জায়গাতেই বন্যা হয়ে থাকে।এই সময় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অনেক মানুষ হয়ে পড়ে সর্বহারা এবং অসহায়। যেমন ক্ষতি হয় ফসলি জমির ঠিক তেমনি ক্ষতি হয় শহরের মানুষের কর্ম দিনের।
এমনকি বন্যার কারণে নদী ভাঙ্গনের ফলে প্রতিবছর প্রায় একর একর জমি বিলীন হয়ে যায় নদীতে।

বন্যা কেন হয়

বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগর নদীর তীরে অবস্থিত।বাংলাদেশ একটি নদী মাতৃক দেশ।এ দেশে সাতটি বৃহত্তম নদী অবস্থিত। এর মধ্যে সকল নদীর শাখা ও উপ শাখার সংখ্যা প্রায় ২৩০ থেকে ৭০০ টি। তাই বাংলাদেশে প্রায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকেই। বর্ষার সময় প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারনে নদী খাল বিল পুকুর ডোবা নালায় প্রচুর বৃষ্টির পানি জমা হয়।অনবরত বৃষ্টিপাত হতে থাকার কারণে এক সময় বন্যার আকার ধারণ করে।যা আমাদের প্রকৃতির জন্য বিশাল এক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

সাধারণত একভাবে চার থেকে পাঁচ দিন বৃষ্টিপাত হতে থাকলেই বন্যার রূপ ধারণ করে। তখন নদীতে থাকা পানি প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে থাকে এ থেকে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়। যা উপচে পড়ে ভূপৃষ্ঠের ওপর। এতে নদীর আশেপাশে থাকা যে সকল অঞ্চলগুলো আছে সে সকল অঞ্চল আগের বন্যায় প্লাবিত হয়। সময়কালের পরিবর্তনে সাথে সাথে বন্যার ভয়াবহতা ও বেড়েই চলেছে। বন্যা হওয়ার প্রধান কারণ বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, গঠন, জনসংখ্যার ঘনত্ব। 

বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব

বাংলাদেশ যেহেতু কৃষি প্রধান দেশ।সেহেতু বন্যার কারণে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। নদী পুকুর ডোবার পানি বন্যা আকারে জন্মস্থানে প্রবেশ করার কারণে বিভিন্ন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয় এতে প্রতি বছরই কৃষকরা প্রায় অনেক টাকা লস করে। যার কৃষকদের আর্থিক অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলে। এছাড়া বন্যার কারণে খাদ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যায়।

শাকসবজি থেকে শুরু করে শস্য দানা মাছ-মাংস সবকিছুর মূল্য হয় আকাশছোঁয়া যা প্রায় মানুষের স্বার্থের বাইরে হয়ে পড়ে। এতে মানুষ তাদের আর্থিক ভারসাম্য হারায়। আর বাংলাদেশে যেহেতু প্রতিবছরই প্রায় কয়েকবার করে বন্যার দেখা মেলে এতে প্রায় সব অঞ্চলের মানুষের কাছে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তোমায় গবাদি পশুর অনেক ক্ষতি হয়। এই সকল ক্ষতিপূরণে পোষানো সাধ্য আর হয়ে ওঠে না নিম্নবিত্তদের।

এমনকি এই বন্যার ভয়াবহতার কারণে নদীর পাশে যে সকল অঞ্চল অবস্থিত সে সকল অঞ্চলের মানুষরা ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে যা। যা সকলের কাছে অনেক কষ্টসাধ্য ও দুঃখের বিষয়। প্রতি বছরের বাংলাদেশের যে বন্যার কারণে ক্ষয়ক্ষতিগুলো হয় তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। এছাড়া শহর অঞ্চলে মানুষের কর্মস্থানের যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রকমের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যে অঞ্চল ঘিরে বন্যা প্লাবিত হয় সে অঞ্চলের মানুষের জীবন মুহূর্তে থমকে যায়।

এমনকি পানি ও খাদ্যের সংকটেও করতে হয় সেই অঞ্চলের লোকজনদের। প্রায় সময়ই বন্যার কারণে বিভিন্ন অসুখের দেখা মেলে। যেমন পচড়া, বিভিন্ন ইনফেকশন জনিত ঘা, ডায়রিয়া , ম্যালেরিয়া, কলেরিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের অসুখ এর দেখা মেলে।এমনকি অনেক সময় বন্যার কারণে বৈদ্যুতিক সংযোগে দুর ব্যবস্থা ঘটে। বৈদ্যুতিক কারণের ব্যাঘাত ঘটায় পানি সংস্পর্শে এলে অনেক মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।


যা আমাদের দেশে সকল মানুষের কাছে দুঃখজনক একটি বিষয়। বন্যার কারণে এই সকল দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে বাংলাদেশের নিচু উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে।

বন্যায় কি কি সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত

  • বন্যার পূর্বাভাস সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
  • বন্যার সময় আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
  • বন্যার পূর্বাভাস জানতে পারা সাথে সাথেই গবাদি পশুকে শুকনো জায়গায় রাখতে হবে।
  • বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
  • শুকনো খাবার যেমন চিড়া গুড় মুড়ি খাগড়ায় এর সকল খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
  • ঘরে শিশু থাকলে শিশুর প্রয়োজনীয় খাবার যেমন দুধ সুজি সেগুলো মজুদ রাখতে হবে।
  • প্রয়োজন পড়লে আশ্রয় স্থানে চলে যেতে হবে।
  • বন্যার সময় বৈদুতিক অপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে মেন সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে।
  • মূল্যবান জিনিস পলিথিনে মুড়িয়ে ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • আশেপাশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে সাহায্য করতে হবে।

বন্যা প্রতিরোধের উপায়

আমাদের দেশে প্রায় প্রতিবছরই কম-বেশি অনেক অঞ্চলে বন্যা হয়ে থাকে তাই বন্যা প্রতিরোধের অনেক উপায় রয়েছে এর মধ্যে অধিক প্রয়োজনীয় ও সহজ উপায় হলো, অধিক হারে বৃক্ষরোপণ করা বা গাছ লাগানো। নদী পুকুরের আশেপাশে বেশি বেশি গাছ লাগালে গাছের শিকড় মাটিকে শক্ত রাখতে সক্ষম থাকে এর ফলে নদী ভাঙন হয় না এবং নদীর পানি উপরে আস্তে সময় লাগে যা বন্যার হাত থেকে একটু হলেও আমাদের রক্ষা দিবে।

এছাড়াও বন্যার পূর্বভাস জানার পরপরই আমাদের উচিত বাড়ির ভিটা উঁচু করা, অনেকে টয়লেট নদী বা পুকুরের পাড়ে স্থাপন করে থাকেন সে বিষয়ে টয়লেটকে সেখান থেকে দূরে হটিয়ে আনা। বন্যা যেহেতু প্রাকৃতিক একটি দুর্যোগ সেহেতু এটি সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তাই বন্যার আক মুহূর্তেই আমাদেরকে সচেতন ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।অতিবৃষ্টির কারণে রাতারাতি যে বাঁধ ভেঙ্গে পানি উপচে পড়ে বাসস্থানের আশেপাশে।

তাই সে মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয়ে বুদ্ধিমত্তার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যথাসাধ্য আশরাফ স্থানে চলে যেতে হবে। বন্যার পানি যখন নেমে যাবে বা শুকিয়ে যাবে তখন আমাদের বাসস্থান উঁচু করে নেওয়া সঠিক হবে। এতে করে পরবর্তী সময় যদি বন্যা হয় তাহলে বাসভবন উঁচু স্থানে থাকার ফলে বন্যায় প্লাবিত হয়ে যাবে না।

বন্যা হয় প্রাকৃতিক কারণে নাকি মনুষ্যসৃষ্ট কারণে

দীর্ঘদিন এক নাগাড়ে বিস্তীর্ণভাবে বিভিন্ন স্থলভাগের প্লাবনকেই বন্যা বলে। বন্যা সাধারণত দুই কারণে হয়ে থাকে।
১)  মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে
বন্যা হওয়ার কারণ এর পিঠে প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ের সমান ভাবে দায়ী। মানুষের জন্য বন্যার সৃষ্টি হয় সাধারণত নিচের এসব কারণের জন্য। যেমন নদী থেকে বা পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বৃষ্টির কারণে যে সকল পানি অতিরিক্ত বেড়ে বাসস্থানের দিকে গড়িয়ে আসে সেগুলো আবদ্ধ হয় একত্রে । এগুলো পানি যাওয়ার জন্য বিভিন্ন নালা নর্দমা রয়েছে।

কিন্তু মানুষের ব্যবহৃত বিভিন্ন জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য, পলিথিন, ময়লা আবর্জনা আরো কত রকমের সমস্যার কারণে নালা নর্দমা গুলো বন্ধ হয়ে পড়ে থাকে। যার ফলে বন্যার পানি বা বৃষ্টির পানি সেদিক দিয়ে যেতে পারে না। এতে করে পানি প্রমাণ নয় বাড়তে থাকে যা একসময় ভয়াবহ বন্যার আকার ধারণ করে। আমাদের উচিত একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে রাস্তাঘাট, নালা নর্দমা, নলকূপ, ইত্যাদি জায়গা গুলোতে ময়লা আবর্জনা না ফেলা। 

নির্দিষ্ট একটি জায়গায় আবর্জনা ফেলা। এতে প্রাকৃতিক দূষণকে হাতে রক্ষা পাওয়া যায়। আবার নদীর তীরে যে সকল গাছ লাগানো ছিল তা কেটে তার শিকড় বিকোর মাটি থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। এতে নদী ভাঙ্গন হচ্ছে এবং নদীর পানি উপকলি ও স্থানে উঠে বন্যার রূপ ধারণ করছে। তাই আমাদের উচিত পুকুরের আশেপাশে বেশি বেশি গাছ লাগানো। নদীর আশেপাশে যে সকল গাছ বা বৃক্ষগুলো রোপন করা আছে তা যেন না কাটা হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।

এছাড়াও এলাকার ছোট ছোট কুকুর খান ডুবা ভরাট করে না ফেলা।এই সকল বিষয়ে অন্য নাগরিককে সচেতন করা। এতে মানুষের কারণে বন্যার সৃষ্টি হতে রেহাই পাওয়া যাবে। 
২) প্রাকৃতিক কারণ
বন্যা আমাদের সকলের কাছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নামে পরিচিত। বন্যার মূল কারণ হিসেবে আমরা জানি অতিমাত্রায় একের অধিক দিন যাবত বৃষ্টিপাত হওয়া। কিন্তু প্রাকৃতিক অনেক কারণ রয়েছে যার ফলে বন্যার ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। যেমনঃ অসময়ে অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত হতে থাকা, নদী ভাঙ্গন হওয়া, নদীর বাক পরিবর্তন হওয়া , নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ প্রতিবন্ধকতা, নদীপ্রনালীর বা পাপ পরিবর্তন করা, হিমালয় পর্বতের শিষের তুষার বড় গোলে পরা, নদীতে পলি সঞ্চয় হওয়া, নদী বাস সমুদ্র তে সাইক্লোনের সৃষ্টি, ইত্যাদি এ সকল প্রাকৃতিক কারণে বন্যার ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে এ সকল কারণে বন্যার মূলে।

শেষ কথা

যেহেতু বন্যার অর্থ পানির অত্যাধিক প্রবাহ। এ থেকে আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারি বন্যার ভয়াবহতা প্রচুর। কেননা যেকোনো কারণে পানির অত্যাধিক প্রবাহ আমাদের জন্য এবং আমাদের পরিবেশ প্রকৃতি সবকিছুর জন্যই ক্ষতিকর। কন্যার কবলে পড়লে প্রকৃতির ও মানুষের নানা রকমের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। যেমন কৃষকের কৃষি জমি বিনষ্ট হয়। গবাদি পশু পানিতে ডুবে মারা যায়। 

যেসব অঞ্চল নিচু ভূমিতে অবস্থিত সে সকল ঘরবাড়ি বন্যায় ভেসে যাওয়ার কারণে মানুষজন ঘর ছাড়া হয় এবং আশ্রয়স্থলে আশ্রয় নেয়। এমনকি প্রচুর মানুষ প্রতিবছর তাদের ভিটা মাটি নদীতে প্লাবিত হয়ে যেতে দেখে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরেও সে সকল মানুষজন তাদের জীবন শুরু থেকে শুরু করতে অক্ষম থাকে। তাই এ সময় আমরা কোন মতে আতঙ্কিত না হয়ে বুদ্ধির সাথে প্রতিটি পদক্ষেপ নেবো। 

এতে আমাদের একটু হলেও ক্ষতি কম হবে। এছাড়াও ওপরে বলা টিপসগুলোর মাধ্যমে বন্যার কবল থেকে বাঁচা যেতে পারে।

আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনার উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন। এবং আরো বিষয় সম্পর্কে জানতে আমার সাথে থাকবেন।
Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url